নজরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে
তাহমিনা ও শ্যামল মিয়া নবদম্পত্তি প্রেমের টানে গত তিন মাস পূর্বে একে অপরের হাত ধরে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দুই পরিবারের ও এলাকাবাসীর সমজোতায় সামাজিক ভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বিবাহের হাতে পড়া মেহেদীর লাল রং মুছে যাওয়ার আগেই তাহমিনার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুকে ঘিরে রয়েছে নানা অভিযোগ রহস্যের ভেড়াজাল।
ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে বৃহস্পতিবার জানা যায়, টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন দাড়াইল বটতলা মো: হোসেন এর মেয়ে তাহমিনার সাথে একই এলাকার ফকির কাঙ্গালীশাহ্র ছেলে শ্যামলের সাথে গত তিন মাস পূর্বে বিয়ে হয়।
নিহতের বড় বোন রেসমা আক্তার জানান,স্থানীয় মাতবর সুন্দর আলী সকাল ৬ টায় খবর দেন আমার বোন তাহমিনা মারা গেছে। আমরা দ্রুত তাহমিনার শশুর বাড়িতে গিয়ে তাহমিনার গলায় উড়না পেঁচিয়ে শয়নকক্ষে বাঁশের ধরনার সাথে লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। একটি কক্ষের ভিতর এক পাশে আমার বোন ও বোনের জামাই থাকতো। অন্য পাশে বোনের ননদ ও ননদের জামাই থাকতো। একই রুমের ভিতর সকলের উপস্থিতি এমনকি তাহমিনা ও তার স্বামী রাত ১২টার সময় ডিউটি শেষে রুমে প্রবেশ করে। তারা রুমে ঢুকার পর ব্যাপক মারামারি,ঝগড়াজাটি করেছে বলে আশপাশের লোকজন জানান। এমনকি আমার বোনের বিয়ের পর থেকে তারা মোটর সাইকেল ও নগদ টাকার জন্য বিভিন্ন সময় অত্যাচার করতো। বোনের সুখের জন্য ৪০ হাজার টাকা ঘর মেরামতের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আমার বোন আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে মেরে ফাঁস লাগিয়ে রাখা হয়েছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবী করছি।
শ্যামলের বড় ভাইয়ের বন্ধু আব্দুর রব জানান, ঘটনার দিন রাতে আনুমানিক ১টা পর্যন্ত আমি এই বাড়িতে ছিলাম। এদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়াজাটি হতো। নিহত তাহমিনা আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। এটি হত্যাকান্ড বলে মনে করি। এলাকার মাদবর সুন্দর আলীসহ একাধিক ব্যক্তি আশপাশের লোকজন সবাই বলেন এটি হত্যাকান্ড। আমরা এর সুষ্ঠু ন্যায় বিচার কামনা করছি। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হউক।
এ ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে (যাহার নং-১২৫১) এবং নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে অভিযোগ করলে যাহার পরিপ্রেক্ষিতে একটি আত্মহত্যায় প্ররোচিত অভিযোগে শ্যামলসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করা হয় (যাহার নং-১৯)।
পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে স্বামীর-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে স্বামীর সাথে অভিমান করিয়া আত্মহত্যা করতে পারে। সুরতহাল প্রতিবেদনে আলামত হিসেবে পড়নের হাফহাতা গেঞ্জি ও বাদামী রঙ্গের পায়জমা দেখানো হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার এসআই নজমুল জানান, নিহতের সকল প্রকার মেডিকেল রিপোর্ট আশার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে বিধায় আমরা বাদির অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি মামলা নিয়েছি। মামলা তদন্ত অব্যাহত আছে।